ছয় মাসের মধ্যে পাঠানো হবে ইতালি, সুইডেন, রোমানিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এসব কথা বলে প্রায় আড়াইশো যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এরমধ্যে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও একজনকেও বিদেশে পাঠাতে পারেননি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শংকরবাটি তেনু মণ্ডলপাড়ার আব্দুল লতিফ নবীন ওরফে নবীন দালাল। এতে রোববার (২০ অক্টোবর) তার বাড়িতে ঘেরাও করে ভুক্তভোগী যুবকরা। সময় সংবাদের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছয় মাসের কথা বলে লাখ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট নেয়ার পর থেকেই প্রতারণা শুরু করেন নবীন। দিনের পর দিন ভিসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে ওয়ার্ক পারমিট দিলেও তা ভুয়া। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ না করে নিজে গড়ে তুলেছেন আলিসান বাড়ি কিনেছেন জমিজমা।
এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে সালিশে বসলে সেখানে ২৫০ পাসপোর্টের ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে দুই মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার সময় পেরিয়ে গেলেও একজনকেও টাকা বা পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়নি। অন্যদিকে ইউরোপের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে ঋণ ও ধারদেনা করে টাকা দিয়ে পথে বসেছেন অনেকেই।
বাড়ি ঘেরাওয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন না নবীন। তার বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় আলিশান তিন তলা ভবনের নিচতলায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনও চোখ ধাঁধানো। প্রতারণা করে এমন বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগে প্রতারক সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য শহরের ধাপাপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর বাড়িও ঘেরাও করে ভুক্তভোগীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউসুফ-নবীন দুই প্রতারক মিলে হাতিয়ে নিয়েছে পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা। আড়াই বছরেও বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেননি। টাকা-পাসপোর্ট ফেরতও পাচ্ছেন না তারা। প্রতারণার এসব টাকা দিয়ে দুই প্রতারক (নবীন-ইউসুফ) আলিশান বাড়ি তৈরি করে আয়েশি জীবন যাপন করছে। এখনও ছলচাতুরী করে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তাদের।
ভুক্তভোগী আরাফাত আলী বলেন, ‘ধার-দেনা করে নবীনকে টাকা ও পাসপোর্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু ছয় মাস বলে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কিছুই করে দিতে পারেননি। উল্টো হাজার বার ঘুরিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই তার বাড়ি ঘেরাও করে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চাই। আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু ব্যবস্থা চাই।’
তরিকুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান, টাকা বা পাসপোর্ট ফেরত চাইতে গিয়ে এখন উল্টো নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে নবীন। পুলিশকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে ক্যামেরার সমানে কথা বলতে রাজি হয়নি নবীনের পরিবারের সদস্যরা। মুঠোফোনে নবীনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, বাড়ি ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ধাপাপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলী ও পৌরসভার শংকরবাটি তেনু মণ্ডলপাড়ার আব্দুল লতিব নবীন বছর পাঁচেক আগে যৌথ মালিকানায় মাহিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শহরের শান্তি মোড়ে দেন অফিস। সেখানে বসে ইতালি, সুইডেন, সাইপ্রাস, রোমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে শুরু করেন প্রতারণা। তারা মিলে প্রতারণা করে পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।