ফেনীতে দাবিকৃত ১২ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ না পেয়ে আহনাফ আল মাঈন নাশিত (১০) নামে এক স্কুলছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে।
অপহরণের চার দিন পর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরতলীর দেওয়ানগঞ্জ রেললাইন সংলগ্ন ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত আহনাফ ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের আনসার আলী ফকির বাড়ির মাঈন উদ্দিন সোহাগের ছোট ছেলে। পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ফেনী পৌরসভার একাডেমি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো আহনাফ।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
পুলিশ সুপার বলেন, গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) শহরের একাডেমি এলাকার আতিকুল আলম সড়কে লাইট হাউজে কোচিং ক্লাস শেষ করে স্থানীয় বায়তুল খায়ের জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় আহনাফ। নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে পূর্বপরিচিত আসামি তুষার ও তার সহযোগীরা আহনাফকে অপহরণ করে দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় নিয়ে জুসের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করেন। পরে আহনাফের ছবি তুলে তার বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। একপর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ রেললাইনের পাশে ডোবায় ফেলে দেন। মরদেহ যেন পানিতে ভেসে না ওঠে সেজন্য ওই শিক্ষার্থীর স্কুল ব্যাগে পাথর ভরে চাপা দেন তারা।
এ ঘটনায় ফেনী পৌর ছাত্রদল কর্মী আশ্রাফ হোসেন তুষার (২০), মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ও ওমর ফারুক রিপাত (২০) কে গ্রেফতার করার কথাও জানান তিনি। গ্রেফতার সবাই শহরের একাডেমি এলাকার আতিকুল আলম সড়কের বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আহনাফের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ গত ৯ ডিসেম্বর ফেনী মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তারপর দুই দিন ধরে একটি মোবাইল নম্বর থেকে আহনাফের বাবাকে কল করে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে গতকাল রাতে নিহতের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ পুলিশকে তুষার নামে এক কিশোরকে সন্দেহের কথা জানান।
পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতে তুষারকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হলে তার দেওয়া তথ্যমতে দেওয়ানগঞ্জ এলাকার একটি ডোবা থেকে আহনাফের স্কুল ব্যাগসহ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্য দুই আসামিকে রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
নিহত আহনাফের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ বলেন, আমার ছেলে কোচিং শেষ করে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যায়। এরপর বাসায় না ফিরলে আমরা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। রাত ১টার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ দিয়ে ছেলের ছবি দিয়ে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজিও ছিলাম। তারপরও তারা আমার ছেলেকে হত্যা করল। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।