বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবকে বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই বিষয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে তারা। চিঠিটি সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের সময় র্যাব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল এবং এসব ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের দায়মুক্তি ছিল। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে যতগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
চিঠিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, ‘আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের কাছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে একটি গণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকার সমুন্নত ভবিষ্যতের জন্য কিছু সুপারিশ করছি। দেশে যখন বড় অশান্তি, বিভক্তি এবং সহিংসতার চলছিল তখন আপনি দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। এটি মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা পুনর্গঠনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগও বটে।
সংস্থাটি জানায়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে মানবাধিকারের উপর নজরদারি করে এবং রিপোর্ট করে। আমরা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন করছি।
চিঠিতে ড. ইউনূসকে বলা হয়, আপনি জানেন, শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলন দমনে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অত্যন্ত বর্বর ও রক্তাক্ত নজির তৈরি হয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৪৪০ জন নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার করেছে এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশ সম্বলিত কারফিউ জারি করেছে। এ ছাড়া ১১ দিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল যে মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকরা প্রমাণ না পান।
এইচআরডব্লিউ জানায়, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর লাখ লাখ মানুষ বিজয় উদযাপন করেছে। তবে কিছু জায়গায় তা সহিংস হয়েছে এবং শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। আতঙ্কে হাজার হাজার হিন্দু সীমান্তে জড়ো হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য।
সংস্থাটি জানায়, `স্বল্প সময়ের মধ্যে, অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ্যে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সহিংসতা প্রশমিত করার জন্য কাজ করেছে এবং বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত এবং নির্বিচারে বল প্রয়োগের জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচার করারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিক্ষোভের কারণে আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ায় আমরা আপনার প্রশংসা করি।’
চিঠিতে বলা হয়, `আমরা গুম হওয়ার পর সন্ধান পাওয়াদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বজনদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। আমরা আহ্বান জানাই আপনি যেন মানবাধিকার সমুন্নত করতে আমাদের সুপারিশগুলো গ্রহণ করেন।’
এরপর সুপারিশে র্যাবকে বিলুপ্ত করার আহ্বন জানানো হয়। এ ছাড়া নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করারও আহ্বান জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।