সৃজনশীলতা যখন কারও জীবনের ধ্রুবতারা হয়ে ওঠে, তখন বয়সের সীমাবদ্ধতাকে হার মানতে হয়। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সবুজ ইসলাম সোহাগ ঠিক এমনই একজন প্রতিভাবান তরুণ, যিনি নিজের প্রচেষ্টা ও দক্ষতার মাধ্যমে সবার জন্য হয়ে উঠছেন এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সোহাগপুর নতুনপাড়া আলহাজ্ব সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সবুজের জীবন অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন। তার সমবয়সীরা যেখানে গেমস কিংবা বিনোদনে মগ্ন, সেখানে সবুজ বেছে নিয়েছে সৃজনশীলতার পথ।
সবুজের যাত্রা শুরু হয় বাড়ির পুরনো একটি ল্যাপটপ থেকে। ইন্টারনেটে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল দেখে তিনি নিজেই শেখেন গ্রাফিক্স ডিজাইন। ধীরে ধীরে শখ থেকে কাজ, আর কাজ থেকে দক্ষতায় পৌঁছানোর পথে তিনি নিজেকে নিয়ে যান এক ভিন্ন উচ্চতায়। শুধু শেখার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে সবুজ পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ শুরু করেন। তাঁর এই আয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের মধ্যবিত্ত পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করছেন, যা তাঁর বয়সের তুলনায় অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বর্তমানে সবুজ Creative IT Solution এ পার্ট-টাইম জুনিয়র ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কাজের পরিধি দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিংয়ে তার দক্ষতা তাকে নিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টে। সবুজ এরই মধ্যে জয়ত্রি এবং সহজবাজার-এর মতো ব্র্যান্ডের স্টাটিক ডিজাইন করছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নাটকের পোস্টার এবং জনপ্রিয় মডেলদের প্রমোশনাল ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করেও প্রশংসিত হয়েছে।
প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ তাকে আরও নতুন কিছু শেখার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করছেন।
সবুজ ইসলাম সোহাগ শুধু একটি নাম নয়, বরং সৃজনশীলতার প্রতীক। তার গল্পটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের দেখিয়ে দেয়, সীমাবদ্ধতাই শেষ কথা নয়; ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব। বেলকুচির মতো মফস্বল এলাকা থেকে উঠে এসে প্রযুক্তি আর সৃজনশীলতার মেলবন্ধনে নিজের জায়গা করে নেওয়া সবুজের এই যাত্রা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
সবুজের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন আরও বড়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছেন। তাঁর এই সৃজনশীল যাত্রা থেমে না যাক এই শুভকামনা। এমন তরুণদের গল্প আমাদের সমাজের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।