বিসিএসে উর্মির চাকরি কি মুক্তিযোদ্ধা কোটায়? যা জানাল পিএসসি

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুম উর্মি। তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ৪০তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তার চাকরি এখনও স্থায়ী হয়নি। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২৪৪ জন সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সেখানে তাপসী তাবাসসুম উর্মি তালিকায় ১০৭ নম্বরে ছিলেন।

এদিকে তাপসী তাবাসসুম উর্মি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে খবর চাউর হয়েছে। নেটিজেনরা বলছেন, তাবাসসুম উর্মি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের চাকরি পেয়েছিলেন। সম্প্রতি তার সনদ জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় এই কর্মকর্তা নিজের ব্যাচমেটদের কাছেও বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।’

নেটিজেনদের দাবি, ‘সর্বশেষ তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরুর আগ মুহূর্তে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে তিনি এই কান্ড করে বসেন। জাল সনদের কারণে চাকরি চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই তিনি এই ঝুঁকি নেন বলে তার নিকটস্থ সুত্র থেকে জানা যায়।’

যদিও নেটিজেনদের এই দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাগজপত্র যাচাই করেন। কাজেই ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই।’

উর্মির মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়ার বিষয়টি যাচাই করতে তার রোল, নাম এবং মেধাক্রম সম্পর্কে যোগাযোগ করা হয় পিএসসি’র শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উর্মি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাননি। তিনি মেধা অনুযায়ী চাকরি পেয়েছেন।’

খোঁজ নিয়ে গেছে, তাপসী তাবাসসুম উর্মি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।

সেই সঙ্গে উর্মির মা নাসরিন জাহান বতর্মানে হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ মুক্তাগাছায় গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। বতর্মানে তারা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পিছনে কাশর জেল রোড এলাকায় নিজ বাসায় বসবাস করেন।

উর্মির মা নাসরিন জাহান বলেন, ‘৪০তম বিসিএস এর আগে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সে যুক্ত ছিল। কিন্তু ও (উর্মি) আসলে বিসিএস পরীক্ষার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক ইতিহাস পড়েছে। এগুলো পড়েই হয়ত বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার প্রতি তার আগ্রহ বেড়েছে। এটা আমার ধারণা। তবে আমরা যুদ্ধ করিনি, যুদ্ধ দেখিওনি। যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটা ইতিহাস। ইতিহাসকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা আমাদের মা-বাবাকে অস্বীকার করতে পারবো কি? বলেও প্রশ্ন রাখেন নাসরিন জাহান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী সরকারি চাকরি করেছেন। তিনি ১৪তম বিসিএস ছিলেন। আমিও সরকারি চাকরি করি। সব জায়গায় চাকরিবিধি মানতে হবে। আমার বাচ্চারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমরা সাধারণ জীবনযাপন করি। আমরা দুজনেই (স্বামী-স্ত্রী) শিক্ষক। রাজনীতি আমার পছন্দ না। বাচ্চাদের শুধু বলেছি, তোমরা লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হও।’

Leave a Comment