স্বামীর চিকিৎসার জন্য বিক্রি করা সন্তান মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল প্রশাসন

দিনাজপুরে ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আহত স্বামীর চিকিৎসা খরচ মেটাতে বাধ্য হয়ে নিজের তিন দিন বয়সী মেয়ে তানহাকে ১২ আগস্ট ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন মা রোকেয়া বেগম।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। অবশেষে প্রশাসন ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে কুড়িগ্রাম সদর থেকে ছোট্ট শিশুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া গেছে। প্রায় এক মাস পর সন্তানকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত বাবা আব্দুর রহিম ও মা রোকেয়া।

সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ি কাটাপাড়া এলাকায় আব্দুর রহিমের বাড়ি গিয়ে তানহাকে তার মা-বাবার কাছে ফেরত দেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় সেখানে ছুটে আসেন আশপাশের অসংখ্য মানুষ। মেয়েকে ফেরত পেয়ে বাবা-মায়ের কান্নায় তৈরি হয় আবেগঘন মুহূর্ত। সন্তানকে কোলে নিয়ে কান্নায় কথা বলতে পারছিলেন মা রোকেয়া। অনুভূতি জানতে চাইলে শুধু বলেন, বাচ্চা পেয়ে ভালো লাগছে।

হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তানহার জন্মের পর বাবা রহিম মেয়ের মুখটাও দেখতে পারেননি। এখন মেয়েকে ফিরে পেয়ে যেন ভুলে গেছেন গুলির ক্ষতে হওয়া অস্ত্রোপচারসহ সব ব্যথা-যন্ত্রণা। তিনি বলেন, “জন্ম হওয়ার পর আজ প্রথম বাচ্চাকে দেখছি। যারা বাচ্চাকে এনে দিল তাদেরকে ধন্যবাদ। সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেছে ওর মা। বাবা হয়ে আমি ওর জন্য কিছু করতে পারিনি। যত কষ্ট হোক, বাচ্চাকে মানুষ করব। ”

সদর উপজেলার ইউএনও ফয়সাল রায়হান বলেন, “সবাই মিলে বাচ্চাকে ফেরত নিয়ে আসতে পারলাম। মায়ের হাসিমুখ দেখে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় পরিবারকে নিয়ে আসা হবে। ”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, “ছাত্রসমাজ, পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আমরা শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। যারা শিশুটিকে নিতে তার বাবা-মাকে টাকা দিয়েছিলেন, সেটি তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।”

Leave a Comment