আন্দোলনকারী ৫ সমন্বয়ক তিন দিনের রিমান্ডে

আন্দোলন প্রত্যাহার করার পরেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের চাকরিরচ্যুতি ও দেশের বিভিন্ন সমিতিতে যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় গ্রেফতার আতঙ্কে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গতকাল রাতে আটক হওয়া আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ককে শুক্রবার আদালতে তোলা হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ আদালত।

তিন দিনের রিমান্ড আদেশ পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন, প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস (এজিএম, মুন্সীগঞ্জ), দীপক কুমার সিংহ (ডিজিএম, কুমিল্লা), আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ডিজিএম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), বেলাল হোসেন (ডিজিএম, সিরাজগঞ্জ), রাহাত (ডিজিএম, মাগুরা)। অপরদিকে কুমিল্লা থেকে আজ ৬ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আন্দোলনের সমন্বয়ক এজিএম আব্দুল হাকিম ও এজিএম সালাউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা জানান, অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন ও অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহক সেবা চালু রেখেই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে অহিংস আন্দোলন করে আসছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার কোন কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও আরইবি কর্তৃক বিনা কারণে ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও ১০ জনের নামে মামলা করা হয়। আরইবির এহেন উস্কানিমূলক কর্মকান্ড বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিচ্যুতির আদেশ বাতিলের দাবিতে শাটডাউন” কর্মসূচী ঘোষণা করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন।

পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম এর অনুরোধে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি পূরণে আলোচনা এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে আলোচনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কর্মসূচি প্রত্যাহারের পরও রাতেই আরও ৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং আরইবি হতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট অসত্য তথ্য প্রদান করায় বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে গতরাত ও আজকে সারাদিন ধরপাকর চালিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ধর-পাকড় ও মামলায় আতংকে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্টেশনে অবস্থান করতে পারছে না।

এমন অবস্থায় গ্রাহক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সচল রাখা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রাহকের সাথে সংশ্লিষ্টতা কিংবা জবাবদিহিতা না থাকায় আর ইবি কর্তৃক সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয় করে ভঙ্গুর বিতরন ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর কারনে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বোর্ডের অনিয়ম ও অদক্ষতার মাশুল দিতে হয় জনগণকে। এবং দায় নিতে হয় সমিতিকে। সমিতিগুলোকে শোষণ করা; হেয় প্রতিপন্ন ও হয়রানি করায় আরইবির কর্মকান্ডে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে সংকটের সমাধান না করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের হয়রানির কারণে ও মামলার ভয়ে আতংকিত হয়ে অনেকেই কর্মস্থলে অবস্থান করার সাহস পাচ্ছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা তৈরি হতে পারে।

এমতাবস্থায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখার স্বার্থে কর্মীদের কর্মস্থলে অবস্থান করা প্রয়োজন। বিধায়, চলমান সংকট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আন্দোলনকারীরা। অন্যথায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে এর দায়ভার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বহন করবে না।

Leave a Comment